বিপদে গার্মেন্টস কর্মীরা
এমনিতেই পৃথিবীটা ভয়ঙ্কর একটা সময় কাটাচ্ছে। মিনিটে মিনিটে মারা যাচ্ছে মানুষ। কোনো কোনো দেশে রাস্তায় পড়ে আছে লাশ। মন ভালো নেই পৃথিবীর কারও। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত মনে হলেও কেউই জানেন না কখন কী হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত কয়েকদিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলাদেশেও আজ সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া গেছে।
দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে।
সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ। গণপরিবহনের চাকা ঘুরছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উল্লেখ্য যে বিজিএমই সভাপতি রুবানা হক ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাকখাত বন্ধ রাখার ঘোষনা দিয়েছেন। তানপর ও গার্মেন্টস মালিকদের বিস্ময়কর এক সিদ্ধান্তে সব কিছুই যেন ব্যর্থ হতে চলেছে। শুক্রবার দিনের শেষ বেলাতেই খবর আসছিল। ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেঁটে পোশাক শ্রমিকরা আসছেন ঢাকার দিকে। আজ দেখা গেল ভয়ঙ্কর চিত্র। গণপরিবহন বন্ধ। যে যেভাবে পারছেন ঢাকার দিকে ছুটছেন। কেউ হেঁটে, কেউবা ট্রাকে, কেউ পিকআপে। ঈদের সময়ের মতোই ভীড় রাস্তায়। কিন্তু পোশাক শ্রমিকদের মনে কোনো আনন্দ নেই। মুখে হাসি নেই। কারণ বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, অন্যদের ঝুঁকিতে ফেলে তারা ফিরছেন। তারা বলছেন, চাকরি বাঁচাতে তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই।
পোশাক মালিকরা অবশ্য সমাজে এবং রাষ্ট্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন। সর্বত্র রয়েছে তাদের অংশিদারিত্ব। সরকার এরইমধ্যে গার্মেন্টসসহ রপ্তানি খাতের জন্য ৫০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এই টাকা মালিকরা দুই শতাংশ হারে সুদে ঋণ পাবেন। তবে শর্ত হচ্ছে, এই টাকা ব্যয় করতে হবে শ্রমিকদের বেতনের খাতে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে গার্মেন্টস খাতের অবদান অনস্বীকার্য। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান এ খাতের শ্রমিকদের। স্বল্প মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায় বলেই অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থেকেছে বাংলাদেশের পোশাক খাত।
এই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে অনেক কথা, লেখালেখি, টকশো হয়েছে। তাদের ভাগ্যের হয়তো কিছুটা পরিবর্তনও হয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ সম্ভবত খুব বেশি করা হয়নি। সমস্ত ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রেখে, মানুষকে ঘরে থাকতে বলে তাদেরকে বলা হয়েছে, কাজে যোগ দিতে। তাদের এই দীর্ঘ ভ্রমণ যে কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা কে না জানে।
অনেকে আশা করছিলেন, করোনা ভাইরাস শুধু নিষ্ঠুরতাই দেখাবে না, মানুষের বিবেকও জাগ্রত করবে। প্রকৃতির প্রতি, একে অন্যের প্রতি আমরা সংবেদনশীল হবো। মানুষ মানুষের জন্য সেই বোধ ফের ফিরে আসবে। ফাউস্টে উচ্চারিত, যারই হই না কেন আমরা আসলে ক্রীতদাসই-তত্ত্ব মিথ্যা প্রমাণ হবে। কিন্তু তা আর সম্ভবত, হওয়ার নয়। আমাদের বিত্তবান গার্মেন্টস মালিকরা সেটাই প্রমাণ করলেন।
No comments